ওষুধ ছাড়াই চিরতরে গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়
হজমের সমস্যার সঙ্গী হয়ে আসে গ্যাস্ট্রিক। খাবারের বিষয়ে আমরা তো বরাবরই অসতর্ক। আবার চারপাশে এমন সব লোভনীয় খাবার থাকে যে, চাইলেও নিজেকে সংযত রাখা যায় না। ফলস্বরূপ গ্যাস্ট্রিক হয় সঙ্গী। শীতের দিনে ভাজাভুজি খাবার একটু বেশিই খাওয়া হয়।
আর এর ফলও মেলে হাতেনাতে। তখন গ্যাস্ট্রিক তাড়াতে সাহায্য নিতে হয় ওষুধের। দোকানে যাবেন এক কোম্পানিরই কয়েক ধরনের গ্যাস্টিকের ওষুধ পাবেন। খোঁজ নিয়ে জানুন সারাদেশে যে পরিমাণ এসিডিটির ওষুধ চলে অন্য সব রোগ মিলেও এ পরিমাণ হয় না।
ওষুধের উপর নির্ভরশীল না হয়ে খাবারের দিকে মনযোগী হউন। যে খাবার গ্যাস্ট্রিক দূর করতে সাহায্য করে সেগুলো খাবারের তালিকায় রাখুন।খাওয়া-দাওয়ায় অনিয়ম, স্বাস্থ্যকর খাবার না খাওয়া, শারীরিক পরিশ্রম না করা, পানি কম খাওয়ার ফলে পেটে গ্যাস তৈরি হতে পারে।
প্রথমদিকেই সচেতন না হলে পরবর্তীতে আলসার হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এবার জেনে নেই কোন কোন খাবার দ্রুত এসিডিটি কমায়-
আদা
অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি উপাদান সমৃদ্ধ খাবার হলো আদা। এই উপাদান গ্যাসের সমস্যা, বুক জ্বালাপোড়া, হজমে সমস্যা এবং অ্যাসিডিটির সমস্যা দ্রুত সমাধানে সক্ষম। পেট ফাঁপা এবং পেটে গ্যাস হলে কাঁচা আদা কুচি করে লবণ দিয়ে খান, দেখবেন গ্যাসের সমস্যার দ্রুত সমাধান পাবেন।
পেঁপে
পেঁপেতে রয়েছে পেপেইন নামক এনজাইম যা হজমশক্তি বাড়ায়। তাই নিয়মিত পেঁপে খাওয়ার অভ্যাস করলে গ্যাসের সমস্যা কম হবে। পেঁপে কাঁচা-পাকা দু’অবস্থায় খেতে পারেন। সবটাতেই উপকার পাবেন।
হলুদ
হজম সংক্রান্ত সব ধরনের সমস্যা সমাধানে হলুদ দারুণ কার্যকর। এটি চর্বিজাতীয় খাবার হজমে ভূমিকা রাখে। তাছাড়া হলুদে প্রদাহনাশক উপাদান থাকে, যা প্রদাহ কমায়।
কলা
যারা বেশি করে লবণ খান, তাদের গ্যাস ও হজমে সমস্যা হতে পারে। কলায় যে পটাশিয়াম আছে তা শরীরের সোডিয়াম ও পটাশিয়ামের ভারসাম্য বজায় রাখে। কলা হজমেও সাহায্য করে। দেহ থেকে দূষিত পদার্থ দূর করে দেয়।
পানি
পানির বহু গুণ। প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দুই গ্লাস করে পানি পান করবেন, দেখবেন সারাদিন আর গ্যাস্ট্রিকের যন্ত্রণা সইতে হবেনা। কারণ পানি হজম শক্তি বাড়াতে বেশ কার্যকরী। তাছাড়া পানি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখতেও কাজ করে।
জিরা
আমাদের প্রায় সবার রান্নাঘরেই জিরা নামক মসলাটি পাওয়া যাবে। এটি অনেক ধরনের রান্নার কাজে ব্যবহার করা হয়। জিরা কিন্তু গ্যাস্ট্রিক সারাতেও দারুণ কার্যকরী। এটি হজম রসকে উদ্দীপিত করে। এর ফলে বদহজম ও অ্যাসিডিটির মতো সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। মসলাদার বা মুখরোচক খাবারের সঙ্গে অনেককেই জিরাপানি খেতে দেখবেন।
তুলসিপাতা
পেটের যেকোনো সমস্যা দূর করতে তুলসিপাতার ব্যবহার বেশ পুরোনো। এই পাতার নির্যাস গ্যাস্ট্রাইটিসে আক্রান্ত ইঁদুরের গ্যাস্ট্রিক মিউকোসার প্রদাহ কমানোর ক্ষেত্রে কার্যকরী বলে গবেষণায় প্রমাণিত হয়েছে। আপনি যদি নিয়মিত তুলসি পাতা খান তবে ওষুধ ছাড়াই দূর হবে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা।
মৌরি
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করতে আরেকটি কার্যকরী খাবার হলো মৌরি। এটি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর করার পাশাপাশি কোষ্ঠকাঠিন্য সারাতেও কাজ করে। মৌরি আমাদের পাকস্থলী এবং অন্ত্রের পেশীগুলোতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। এর ফলে অ্যাসিড রিফ্লাক্সের কারণে সৃষ্ট গ্যাস ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়।
ক্যামোমিল টি
গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার জন্য আরেকটি সহজ ও কার্যকরী খাবার হলো ক্যামোমিল টি। এই ভেষজ চা নিয়মিত খেলে ওষুধ ছাড়াই দূর হবে গ্যাস্ট্রিক। ক্যামোমিল টি গ্যাস্ট্রিকের কারণে সৃষ্ট প্রদাহ কমানোর পাশাপাশি মুক্তি দেয় আলসার থেকেও। প্রতিদিন এক কাপ ক্যামোমিল টি পান করলে আপনার হজম ক্ষমতা বাড়াতে কাজ করবে।
দই
দইয়ে ল্যাকটোব্যাকিলাস, অ্যাসিডোফিলাস ও বিফিডাসের মতো নানা ধরনের উপকারী ব্যাকটেরিয়া থাকে। এসব উপকারী ব্যাকটেরিয়া দ্রুত খাবার হজমে সাহায্য করে সেই সঙ্গে খারাপ ব্যাকটেরিয়া ধ্বংস করে। তাই দই খেলে হজম ভালো হয়, গ্যাস কমে। এজন্য খাবারের পর দই খাওয়া বেশ কার্যকর। বিশেষ করে টক দই।
শসা
পেট ঠাণ্ডা রাখতে বেশ কার্যকরী খাবার শসা। কাঁচা শসা হজমেও সাহায্য করে। এতে রয়েছে ফ্লেভানয়েড এবং অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা পেটে গ্যাসের উদ্রেক কমায়। এছাড়া এতে আছে প্রচুর সিলিকা ও ভিটামিন-সি। যা দেহের ওজন কমাতে আদর্শ টনিক হিসেবে কাজ করে। নিয়মিত শসা খেলে দীর্ঘমেয়াদি কোষ্ঠকাঠিন্যও দূর হয়।
পুদিনা
পেট ফাঁপার সমস্যা থাকলে নিয়মিত পুদিনাপাতা খাবেন। এই ভেষজ আপনার পেটে গ্যাস জমতে দেয় না। পেপারমিন্ট অয়েলে থাকে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল যৌগ, যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে আপনাকে সাহায্য করবে।
আনারস
আনারসে রয়েছে ৮৫ শতাংশ পানি এবং ব্রোমেলিন নামক হজমে সাহায্যকারী প্রাকৃতিক এনজাইম যা অত্যন্ত কার্যকরী একটি পাচক রস। এটি পরিপাকতন্ত্র পরিষ্কার রাখে। তাছাড়া আনারস ত্বকের জন্যও উপকারী।
গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া খুব বেশি কঠিন কিছু নয়। শুধু একটু নজর রাখতে হবে নিজের খাওয়া-দাওয়ার প্রতি। উল্লেখিত খাবারগুলোর সঙ্গে আঁশ জাতীয় খাবার বেশি বেশি করে নিয়মিত খাওয়া শুরু করুন তাহলে দেখবেন আপনাকে আর গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগতে হবে না। কিনতে হবে না ওষুধ এবং সাশ্রয় হবে আপনার উপার্জিত অর্থ।